কমরেড পু-এর আত্মহত্যা - একটি পোস্টমডার্ন কবিতা

উৎসর্গ : মারুফুল আলম
কমরেড পু, ম-১ এর খুড়তুতো বোন, গলায় দড়ি বেঁধে, ঝুলে পড়ল ।
         পুলিশের ডাক্তার ট-১ জানিয়েছিল, যুবতীটি মারা গেছেন
রাত ১টা ৪০শে, তাহলে পু ওর আত্মহত্যার কবিতায়, তারিখের তলায়
         কেন সময় লিখেছে রাত ৩টে ৩০ ?
কবিতাটা থানা থেকে পাওয়া যায়নি, ইন্সপেক্টর জ-৩ বললেন,
         সনেটে লেখা আত্মহত্যার চিরকুট ফেরত দেয়া নিষেধ ।
এফ আই আর-এ লেখা ছিল, "চাঁদ ওঠে নাই, বাতাস বহিয়াছিল, শৃগালিনী
         পুংশৃগালকে ডাকিতেছিল, ইহা শরৎকাল, ৩০০ বছরের পুরানো ইঁট,
         বরগার চিড়ের কারণে চড়াইপাখির ডিম পড়িয়া ফাটিয়া গিয়াছে,
         পুংচড়াই নালিশ করিতেছিল, নথিবদ্ধ করা হইয়াছে ।"
কমরেড পু, যে ম-১ এর কাকা ন-২ এর মেয়ে, কেন আত্মহত্যা করল
         তা কবিতায় লেখেনি । পু সোভিয়েত রাষ্ট্রে যেতে চায়নি ।
         পু মনে করতো, রুবলহারামিরা নবযুগ আনতে পারবে না,
         নিজের, ছেলেমেয়ের, জ্ঞাতিগুষ্টির নবযুগ আনবে বটে,
         বাড়ি, গাড়ি, নার্সিং হোম, প্রায়ভেট স্কুল খুলে ফেলবে ।
         ম-১কে লিখে বলেছে, "ছোড়দা, ছন্দে ভুল থাকলে শুধরে দিও।"
ম-১ তো নিজেই কোনো জন্মে সনেট লেখেনি, মনে-মনে ছকে রেখেছিল,
         কখনও আত্মহত্যা করলে, নাটকের আঙ্গিকে চিরকুট লিখবে,
কেননা ম-১ এর আত্মহত্যা করার বহু কারণ জীবনে ঘটে থাকলেও,
         কাজটা ম-১ মুলতুবি রেখেছে, ম-১ এর জীবনে খলনায়ক
         সংখ্যায় বড়ো বেশি, যেমন স-২, স-৩, স-৪, শ-১, শ-২ ।
কমরেড পু-এর আত্মহত্যার কোনো কারণ ছিল না । এই ব্যাপারটাই
         ভালো লাগে ম-১ এর, আত্মহত্যার কারণ না থাকলেও
         আত্মহত্যার ইচ্ছে । পু টাকাহারামিদেরও বিশ্বাস করতে পারেনি ।
         বলতো, "আমাদের আদর্শকে গুয়ের সমুদ্রে চুবিয়ে দেবে ।"
ইচ্ছেকে ক্রিয়ায় পালটে ফেলার আহ্লাদটাই কমরেড পু-এর
         আত্মহত্যার কারণ হতে পারে ।
পু যে নিৎশে, কাফকা, ভারতচন্দ্র, ঋত্বিক পড়তো, তা ম-১ জানে,
         'রসমঞ্জরী' পড়ে জানতে চাইতো ও কোন ধরণের যুবতী ।
পু আত্মহত্যা করার পর, বড়োঘরের বরগা, যা থেকে পু ঝুলেছিল,
         ভেঙে পুরোবাড়ি ধ্বসে পড়ল যখন, পু-এর আত্মহত্যা
         গুরুত্ব হারিয়ে হয়ে গেল বসতবাড়ির আত্মহত্যা ।
ম-১ এর ঠাকুমা অ বললেন, "ওই ঘর ছিল অভিশপ্ত, তোদের বংশের অনেক
         লম্পট পুরুষ বাইজির মদে মেশানো বিষ খেয়ে মরেছে ;
তা হত্যা ছিল না আত্মহত্যা না অতিযৌনতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা, আজও
         জানা যায়নি।"
ঠাকুমা অ বলে উঠেছিলেন, "ছি ছি রসমঞ্জরী ! কোন মেয়ের চুল নেই
         কোন মেয়ের কম চুল, কোন মেয়ের চুলে চুল ! ওই চুলের খোঁজেই
বংশের পুরুষগুলো মাগিদের কোঁচড়ে মুখ গুঁজে মরল । তোরা মাগিদের নিয়ে
        র‌্যালা করলে বেপাড়ায় গিয়ে করিস, সেখানকার মাগিরা
        চুল রাখে না বলে শুনিচি ।"
ম-১ এর দাদা স-১ জানতে চেয়েছিল, "এই অভিশপ্ত ব্যাপারটা কী গো?"
         ঠাকুমা অ বলেছিলেন, "ওসব আমাদের কালের ব্যাপার,
         বজরা ভাসতো, ঝাড়লন্ঠনের রোশনাই ঝিকমিক, ঘুঙুর,
         চিকের আড়াল, রুপোর রেকাবি, বিলিতি মদ, মুজরো।"
ঠাকুমার পরামর্শে ম-১ আর তার দাদা স-১ যৌবনে অনেক মাগিবাজি
         করেছিল । তরুণী গবেষকরা তা লিখে রেখেছেন ।
পু তা জানতে পারেনি, ভাগ্যিস । নয়তো এই নিমকলঙ্ককেই ওর
         আত্মহত্যার কারণ বলে শিলমোহর দিতো ।
সেই থেকে চিরকুটহীন আত্মহত্যা ম-১ এর পছন্দ । সনেটের বদলে
         পু ওয়াটার কালার এঁকে যেতে পারতো ।
ফ্রেমে আত্মহত্যা বাঁধিয়ে রাখতো ম-১ এর কাকা ন-২, আর পু-এর নিজের
         দুই বেয়াড়া ভাই জ আর ম-২ ।
আত্মহত্যার কোনো কারণ থাকা উচিত নয় । কেন ক-এর জন্য খ,
         খ-এর জন্য গ, গ-এর জন্য ঘ, ঘ-এর জন্য ঙ, ঙ-এর জন্য
আত্মহত্যা করার কারণের মানে হয় না কোনো । আত্মহত্যা করার হলে
         উঠে দাঁড়াও, বিষ খাও, সন্ধ্যার নদীতে গিয়ে ডুব দাও,
         আকাশ তোমাকে দেখুক চুল এলিয়ে সাগরের দিকে ভেসে চলেছ ।

Comments

Popular posts from this blog

"The Hungryalists" reviewed by Madhavi S Mahadevan in New Indian Express

Ashutosh Bharadwaj's argument is applicable to Hungryalist Movement

Malay Roychoudhury's poem 'Stark Electric Jesus' : Analysis by Prof Shital Choudhuri